ঢাকা,রোববার, ৫ মে ২০২৪

খুটাখালীতে জন্মসনদ জটিলতা, ভোটার হতে টাকা লাগে!

সেলিম উদ্দীন,ঈদগাঁহ ::  চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীতে ভোটার হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম দ্বিতীয় দফে শুরু করা হয়েছে। প্রথম দফায় ভোটার হালনাগাদ শুরু হলেও জন্মসনদ জটিলতায় অনেকেই ভোটার হতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২ জুলাই থেকে আনুষ্টানিকভাবে তথ্য সংগ্রহ শুরু করা হয়। চলে ২২ জুলাই পর্যন্ত। তথ্য সংগ্রহকারীদের নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির পর উপজেলা প্রশাসন হালনাগাদের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২৯ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এই উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ছিলো ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫০জন। ৩৯ জন সুপারভাইজারের অধিনে ১৫৭জন তথ্য সংগ্রহকারী ভোটার হালানাগাদের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো.সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারী যাদের জন্ম তাদের ভোটার তালিকার তথ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভোটার হতে ইচ্ছুকরা তথ্য সংগ্রহকারীর কাছ থেকে ফরম নিয়ে পুরণের পর ওই ফরমের সাথে মা-বাবা ছাড়াও ভাই-বোন, চাচা-ফুপিসহ মোট ৫ জনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, অনলাইন রেকর্ডভুক্ত জন্মসনদ এবং যারা পড়া-লেখায় রয়েছেন তাদের এসএসসি পাসের সনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এসব নিয়মের বাইরে ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে খুটাখালীতে চলছে হালনাগাদ কার্যক্রম। তৎমধ্যে রোহিঙ্গা ভোটার হতে টাকা লাগে ১২ হাজার! অনেক লোক রয়েছে যাদের বয়স বিবেচনায় নতুন ভোটার হতে পারবে। কিন্তু সম্পূর্ণ কাগজপত্র না থাকায় ভোটার ফরমে অন্তর্ভূক্ত হতে পারছেনা। বিশেষ করে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়া যাচ্ছেন। এমনতর অভিযোগ একজন শিক্ষকের। তিনি ভোটার তালিকা হালনাগাদের দায়িত্বে রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোহিঙ্গা প্রবেশের পর থেকে কক্সবাজার জেলায় সরকারী ঘোষনামতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অনলাইন সার্ভার বন্ধ রয়েছে। যার কারণে ঐসময় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নতুন নিবন্ধন, সংশোধন, পুরানো এন্ট্রিকৃত অনলাইনে জন্মসনদ প্রদান করছেনা। সাধারন মানুষের প্রশ্ন যদি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান না করে তাহলে কিভাবে ভোটার হবে? দীর্ঘদিন রোহিঙ্গা অযুহাতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ রাখার দায়ভার কে বহন করবে? এই পরিস্থিতিতে তারা মনে করছেন বার্মার নাগরিকরা রোহিঙ্গা নয় বরং খুটাখালীবাসীই এখন রোহিঙ্গা। সম্প্রতি ইউনিয়নের হালনাগাদ ফরম পুরনকৃত বেশ ক’জন ভোটার জানান, ভোটার হতে অনলাইন জন্মনিবন্ধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে যায়। তারা বলছে সার্ভার বন্ধ থাকায় জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়া যাবে না। কিন্তু ভিন্ন উপায়ে পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রতি ৩ হাজার টাকা আদায় করছে একটি চক্র। এই বিষয়ে একাধিক ভূক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৩ হাজার টাকা দিলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষরযুক্ত অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ মিলছে। তাদের অভিযোগ জন্মনিবন্ধনের সার্ভার বন্ধ থাকলে টাকার বিনিময়ে কিভাবে সনদ মিলছে। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ নির্ধারিত করে দেয়া চেয়ারম্যানের খাসলোক পরিচয়ধারী একজন কর্তাবাবুর বিরুদ্ধে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ কর্তাবাবুর কারনে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ ইস্যুতে প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদে হাজার হাজার ভূক্তভোগী হয়রানীর শিকার হচ্ছে। চরম হয়রানীর শিকার ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চরম গ্যাড়াকলে পড়েছেন। অপরদিকে ভোটার হতে ইচ্ছুক অসংখ্য তরুণ ও তাদের অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, ভোটার হওয়ার যোগ্য অংসখ্য ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তাদের অনেকেই জন্মসনদ প্রদান বন্ধ থাকায় ইচ্ছে থাকলেও ভোটার হতে পারছেননা।’ জানা গেছে, খুটাখালীতে ভোটার হালনাগাদ বা নতুন ভোটার তালিকা তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার নিয়ম থাকলেও সেই নিয়ম অনেকে মানছেন না। নতুন ভোটারদের ফোন করে ডেকে তথ্য নেয়ার পাশাপাশি টাকা আদায় করছেন। ফরম পূরণের কথা বলে টাকা নিচ্ছে। টাকা না দিলে ফরম পূরণ করছেন না এমনতর অভিযোগ ভোটারের। সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্য সংগ্রকারীরা বলছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ টাকা নেয়ার নিয়ম নেই, এরকম পাওয়া গেলে ভোটার ফরমসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জব্দ করা হবে। টাকা নিয়ে ভোটার করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তারা উল্টো সাংবাদিকরা ‘গুজব’ ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। এব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জন্মসনদ অবশ্যই দিতে হবে। কেউ দিতে না পারলেও আমাদের করার কিছুই নেই। টাকা নিয়ে ভোটার করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: